ফিরেও তাকায়নি মেয়ে-জামাই! পাশে পাননি পরিবারকেও! আর্থিক কষ্টে তিলে তিলে শেষ হয়ে গিয়েছেন ক্যা’ন্সারে আক্রান্ত অভিনেত্রী বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়!

বাংলা চলচ্চিত্র জগতের (Film Industry) উজ্জ্বল নক্ষত্রদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। একাধিক ছবি, সিরিয়ালে (Bengali Serial) দাপটে সঙ্গে অভিনয় করেছেন। মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকে অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তারপর থেকে কখনোই থেমে থাকেননি। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অভিনয়ের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। কষ্টের মাঝেও অভিনয়কে কখনো হাতছাড়া করেননি। তিনি হলেন সকলের প্রিয় বাসন্তী চ্যাটার্জী (Basanti Chatterjee)।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে থিয়েটারের হাত ধরে অভিষেকের পর তিনি সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়সহ বহু শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ঠগিনী, আমি সে ও সখা, আলো ও মঞ্জরী অপেরা। এছাড়াও টেলিভিশনের পর্দায় তিনি ভূতু, বরণ, দুর্গা দুর্গেশ্বরী এবং শেষবার গীতা এলএলবি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। শৈশবকাল থেকেই তিনি অভিনয় ও মঞ্চশিল্পের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ছোট থেকেই নাটক করতে করতে বড় পর্দায় কাজের সুযোগ আসে।
জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত তিনি নিয়মিত অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রায় পাঁচ দশকব্যাপী কর্মজীবনে তিনি থিয়েটার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন—তিন মাধ্যমেই সফলতার ছাপ রেখে গেছেন। জীবনে অনেক বাধা-বিপত্তি বেরোতে হয়েছে অভিনেত্রীকে শেষ বয়সে ভক্তি হয়েছে আর্থিক সমস্যায় মানসিক শান্তি ও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তাই নিজের চিকিৎসার জন্য শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করেছেন কাজ করেছেন।
নিজের খরচ তাঁকে নিজেকেই বহন করতে হয়। প্রতি মাসে কুড়ি হাজার টাকার ওষুধ খান বাসন্তী। সঙ্গে আসে মোট ৪৫০০ টাকার ইনজেকশন। তাঁর মেয়ে সেভাবে তাঁর দেখাশোনা করতে পারেন না তিনি বিবাহিত। প্রথমবার অভিনেত্রী যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সময় বাড়ি থেকে জামাই একদিন দেখা করতে এসেছিলেন। একদিন এসেছিলেন ছেলে-বউমা। তারপরই আর যোগাযোগ রাখেনি কেউ। শেষ সময়ের নিঃসঙ্গতায় বাসন্তীদেবীর সঙ্গী ছিল এক পরিচারিকা আর তার ড্রাইভার।
গত বছর গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অভিনেত্রী। তার চিকিৎসার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তী। এছাড়াও অন্যদের সহায়তায় সুস্থ হয়ে ফের ধারাবাহিক সেটে ফেরেন অভিনেত্রী। আর্থিকভাবে সাহায্য করার মত আত্মীয়-স্বজন কেউই ছিল না। চলতি বছরের শুরুর দিকে আবারো গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যার কারণে দীর্ঘদিন বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলেন অভিনেত্রী। পাঁজরের হাড় ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। বাসন্তীদেবীর হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন সহ-অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়।
দীর্ঘদিন ধরে পেটের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। গত বছর পেসমেকারও বসানো হয়েছিল। অভিনেত্রীর একটি কিডনিও সচল ছিল না। অবশেষে সব যুদ্ধের কাছে হার মেনে চলতি মাসের ১২ তারিখ প্রয়াত হন অভিনেত্রী। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তার মৃত্যুর খবরে একাধিক অভিনেতা-অভিনেত্রীরা শোকবার্তা জানিয়েছিলেন। ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ধারাবাহিক ‘গীতা এলএলবি’তে বাসন্তীদি আমার মা হয়েছিলেন। মনে হচ্ছে যেন সত্যিই মাতৃবিয়োগ হল। দিদি যে কী কষ্ট করেছেন, কতটা কষ্ট পেয়েছেন— সব দেখেছি। বিশেষ করে শেষ দিকে বড্ড বেশি যন্ত্রণা সহ্য করে গেলেন।’
আরও পড়ুনঃ ক্রিকেট ছেড়ে অভিনয়কে করেছেন পেশা! প্রাক্তনের পাল্লায় জীবন হয়েছিল ছারখার! জেনে নিন পরিণীতা ধারাবাহিকের রায়ানের বাস্তব জীবন কাহিনী!
এছাড়াও স্নেহাশিসের অভিনেত্রী স্ত্রী রূপসা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের প্রযোজনায় অনেক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন দিদি। দেখে খুব খারাপ লেগেছে, শরীর না দিলেও রোজ দমদম পার্ক থেকে আসতেন টালিগঞ্জে। শুটিং করতেন। ক্যামেরার মুখোমুখি হলে অবশ্য অসুস্থতার কথা মনে থাকত না তাঁর। অত সমস্যা নিয়েও কী সাবলীল ভাবে প্রত্যেকটা চরিত্র ফুটিয়ে তুলতেন।’